শিক্ষণীয় গল্প : মিসড কল



আবার সেই আগের নাম্বার কী করি? কল রিসিভ করব? না করব না? নাঈমা না তো আবার? কারণ ওকে এস এম এস করতেই উক্ত নাম্বার থেকে কলটি এসেছে
হাবীবা এতক্ষণ দ্বিধাবিভক্ত ছিল আচ্ছা, এবার যদি কল আসে কথা বলব না, রিসিভ করে চুপটি মেরে কানের কাছে ধরে রাখব ..... আটার খামিরা তৈরী করে উঠতে না উঠতেই আবার ফোন হাবীবা কল রিসিভ করল কিন্ত অপর প্রান্তে কারো কোন সাড়া শব্দ নেই কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল : কে? আবারও সেই নীরবতাকেউ কথা বলছে না । বিরক্ত হয়ে সে লাইন কেটে দিল এখন কী করব? যুবায়ের ঘরে ফিরে এমন তামাশা দেখলে আমি তাকে কী জবাব দেব ? সে কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? এমন নানা প্রশ্নে হাবীবা উৎকণ্ঠিত
কী মনে করে সে নাঈমাকে এস এম এস করল: ‘নাঈমা! তুমি কি আমার নাম্বারে কল করেছ?’
তার নম্বর কেবল নাঈমা   খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছাড়া কারো জানার কথা নয় কয়েকদিন হলো যুবায়ের তাকে এই নাম্বারটা দিয়েছে
নাঈমাকে এস এম এস করতেই রিপ্লাই এলো : না, আমি তো কল করিনি!
নাঈমার সরল উত্তরে তার উৎকণ্ঠা বেড়ে গেল থেমে থেমে একটু পর পর মোবাইল বাজতে লাগল ওদিকে যুবায়েরের ঘরে ফেরার সময় হয়েছে হাবীবা রুটি বানাতে বসে গেল কল লিস্ট থেকে আগের মিসকলগুলি মুছে ফেলেছিল সে মোবাইল সাইলেন্ট করে চার্জে বসাল প্রতিদিনের ন্যায় আজও হাসিমুখে ঘরে ফিরল যুবায়ের হাবীবাও তাকে হাসিমুখে রিসিভ করল, তবে ভেতরের চাঞ্চল্যতা লুকাতে পারল না
আজ কি শরীর খারাপ?
কৈ, নাতো ..... ওহ! রুটি তাওয়ার ওপর রেখে এসেছি বলে- হাবীবা দ্রুত রান্নাঘরে পা বাড়াল । যুবায়ের শয়নকক্ষে গেল
এই দ্রুত খাবার নিয়ে এসো, খুব খিদে পেয়েছে
এই তো হয়েগেছে, নিয়ে আসছি
এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেল মোবাইলস্কিনে আলো জ্বলে ‘2 Missed Call’ লেখা ভেসে উঠল হাবীবার মোবাইলে অপরিচিত নম্বরের কল দেখে যুবায়ের ভ্রুকুঞ্চিত করল হাবীবা খাবার নিয়ে এলো যুবায়ের তখন মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে
দেখো ! এটা কার নম্বর? দুবার কল এসেছে মোবাইল সাইলেন্ট থাকায় তুমি বুঝতে পারো নি হয়তো তোমার কেউ হবে, কল করে জিজ্ঞেস কর
নাম্বার থেকে আগেও কল এসেছিল, আমি রিসিভ করেছিলাম কিন্তু কেউ কথা বলেনি কল দিয়ে চুপ করে থাকে
কৈ? মোবাইলের কললিস্টে তো কোন নম্বর নেই!
ডিলিট করে ফেলেছি ভেতরের অস্থিরতা চেপে রেখে হাবীবা উত্তর দিল
একটু অপেক্ষা কর দেখছি ’- বলে যুবায়ের নিজের নাম্বার দিয়ে কল করল
জ্বী, কে বলছেন? অপরপ্রান্তে পুরুষের কণ্ঠ শুনে যুবায়েরের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল
আপনি অমুক নম্বরে কল করেছিলেন
না , আমি তো কোন কল করিনি !
না ভাই ! পনেরো মিনিট আগে আপনার নম্বর থেকে দুটি কল এসেছে এবং এরপূর্বে আরো একবার কল এসেছিল
‘না ! আপনি ভুল বলছেন আমি তো নাম্বারে বিলকুল ফোন করিনি বলে লোকটি ফোন কেটে দিল
যুবায়ের রাগে ক্ষোভে হাবীবার দিকে এক নজর তাকাল
এসব কি তবে নাটক? আমি ভাবতেও পারিনি তোমার প্রতি আমার আস্থাকে এভাবে গলা টিপে মারবে
হাবীবা অশ্রু সংবরণ করতে পারল না নিরপরাধ হয়েও আজ তাকে অপরাধী হতে হল যুবায়ের তার সামনেই সীম দুভেঙ্গে টুকরো করে ফেলল মোবাইল পকেটে ভরে খেতে বসল কোনমতে এক দুলোকমা মুখে দিয়ে বলল:
নিয়ে যাও অনেক খেয়েছি!
হাবীবা চোখের পানি মুছতে মুছতে দস্তরখান উঠাল তার শৈশবের অভ্যাস নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে কখনো একটি টু শব্দও করে না এজন্য তাকে নিয়ে তার মায়ের চিন্তার অন্ত ছিল না এই নীরবতাই আজ তার জন্য কাল হল । একটু আগেও যে স্বামীর চোখের পুতলী ছিল ক্ষণিকের ব্যবধানে সে এখন স্বামীর চক্ষুশূল নীরবকান্নায় হাবীবার রাত পোহাল যুবায়ের সকালে নাস্তা না করেই দোকানে চলে গেল
হাবীবা জায়নামায বিছিয়ে দুরাকাত নফল পড়ল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সব অভিযোগ আল্লাহকে শোনাল দয়াময় প্রভুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল দগ্ধ অন্তরে কিছুটা প্রশান্তি পেল বহু কষ্টে দিন গেল সন্ধ্যায় বাসায় হঠাৎ নাঈমার আগমনে হাবীবা খুব অবাক হল
নাঈমা ! তুমি হঠাৎ?
হঠাৎ নয়, সকাল থেকে বারবার তোমাকে ফোন করছি, একবারও খোলা পাইনি অগত্যা বাসায় আসতে হল আচ্ছা, তোমার কি মন খারাপ?
আগে বসো তো !
বেশিক্ষণ বসতে পারব না আমার ভাতিজার আকিকার দাওয়াত দিতে এসেছি
আচ্ছা, তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসি
লৌকিকতা করে কী লাভ? আমারও মাথা ব্যথা করছে চল চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা বলি
হাবীবার পিছে পিছে নাঈমাও রান্নাঘরে ঢুকল ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি টেনে বলল:
হাবীবা ! গতকালের দুষ্টুমিটা কেমন হয়েছিল?
কোন দুষ্টুমি? হাবীবা অবাক হয়ে জানতে চাইল
ওই যে অপরিচিত নম্বর থেকে মিস্ড কল গতকাল ভাতিজা বাসায় এসেছিল মোবাইল বাসায় চার্জে রেখে ও বাইরে গিয়েছিল সুযোগ পেয়ে ভাবলাম তোমার সাথে একটু দুষ্টুমি করি
নাঈমা বলে চলল ওদিকে হাবীবা চা তৈরী করতে করতে থেমে গেল দুচোখ তার অশ্রুতে ভরে উঠল
আরে হাবীবা ! কী হয়েছে? কাঁদছ কেন?
গতকাল আমি জিজ্ঞেস করলে তুমি না অস্বীকার করে বলেছিলে ফোন করোনি?
আরে ওটা তো আমি দুষ্টুমি করেছিলাম
কিন্তু এমন ভয়ানক দুষ্টুমি!? তোমার এই দুষ্টুমির কারণেই আমি আমার স্বামীর আস্থা হারিয়েছি বলতো, স্বামীকে এখন কিভাবে বুঝাবো!
নাঈমা শুকনা কাঠের মত নির্বাক দাঁড়িয়ে হাবীবার কথা শুনছে
সে আমাকে সন্দেহ করছে মোবাইল নিয়ে গেছে আর আমার সামনে সীম ভেঙ্গে দুটুকরো করে ফেলেছে আমাদের দাম্পত্যসম্পর্কে চিড় ধরেছে নাঈমা ! আমি এখন কোথায় যাব কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না
নাঈমার শুকনো ঠোঁট এতক্ষণে সচল হল হাবীবা ! আগে পিছে না ভেবে আমি এমনটি করে ফেলেছি ভাবতেও পারিনি আমার দুষ্টুমি কারো সংসারে অশান্তি ডেকে আনবে আমাকে মাফ কর হাবীবা !
নাঈমা অশ্রুভেজা চোখে হাবীবাকে জড়িয়ে ধরল .....ইতোপূর্বে নাঈমা কখনো হাবীবার স্বামীর সাথে কথা বলেনি কিন্তু আজকের ঘটনা যা স্পর্শকাতর তাতে নাঈমার কর্তব্য স্বয়ং যুবায়েরকে ফোন করে বুঝান সুতরাং নাঈমা তাই করল ।
আল কুরআন : যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে (সুরা আহযাব, আয়াত : ৫৮)
আল হাদীস : মুসলমান সেই, যার আচরণ-উচ্চারণে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে (সহিহ বুখারী, হাদীস নং : ১০)
পাঠক !
আপনার এই ‘একটু দুষ্টুমি’ কারো জীবনে অশান্তির আগুন জ্বালাতে পারে বিশেষত: বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে মোবাইল-ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুবই সংবেদনশীল অসম্ভব নয়, আপনার এই ‘একটু দুষ্টুমি’ মুহূর্তে কারো সাজানো সুখের সংসার ভাঙ্গতে পারে সুতরাং সচেতন হোন এবং দুষ্টুমির ক্ষেত্রে মাত্রাজ্ঞান বজায় রাখুন
লিখেছেন : উম্মে শাহামা

No comments

Powered by Blogger.